স্ট্রোক
স্ট্রোক বা ব্রেইনঅ্যাটাক একটি ইমার্জেন্সি কন্ডিশন।যেকোনো বয়সের ব্যক্তির এই ধরনের কন্ডিশন দেখা দিতে পারে।এটি এমন এক অবস্থা যেখানে আমাদের মস্তিষ্কের কোষ যেটিকে মেডিক্যাল ভাষায় বলা হয় নিউরন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।আমরা জানি মস্তিষ্ক আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।আমাদেরচিন্তা,চেতনা,আবেগ,অনুভূতি,বিচক্ষণতা,অঙ্গচালনা,কথা বলা,শ্রবণ এমনকি আমাদের হৃদকৃয়া,শ্বাসপ্রশ্বাস এসবই নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্ক।এই উন্নত মস্তিষ্কের জন্যই আমরা সৃষ্টির সেরা জীব।
স্ট্রোকের কারণে আমাদের মস্তিষ্কের কাজ আংশিক বা পুরোপুরি ব্যাহত হয় এমনকি আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
স্ট্রোক কীভাবে হয়?
স্ট্রোক দুইভাবে হতে পারে।
- ইস্কেমিক স্ট্রোক(Ischaemic stroke):আমাদের মস্তিষ্কের কোষগুলোর বেঁচে থাকার জন্য ও স্বাভাবিক কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও পুষ্টির প্রয়োজন।আর এইসব প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে অসংখ্য রক্তনালী।এইসব রক্তনালির কোথাও সঙ্কুচিত হলে অথবা ভিতরে চর্বির প্লাক বা জমাট বাধা রক্ত আটকে গেলে রক্ত প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়।একে বলা হয় ইসকেমিয়া।এর ফলস্বরূপ মস্তিষ্কের কোষ বা নিউরন গুলোর মৃত্যু হতে থাকে।
- হেমোরেজিক স্ট্রোক(Haemorrhagic Stroke):মস্তিষ্কের রক্তনালিকার কোথাও ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা ছিঁড়ে গেলে মস্তিষ্কের ভেতরে অনেক রক্তপাত হয়।এই রক্ত মস্তিষ্কে চাপ প্রয়োগ করে এর ফলে নিউরন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।তাছাড়া এতে রক্তপ্রবাহও বিগ্নিত হয়।এর ফলে মস্তিষ্ক পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও পুষ্টি পায়না।
.
স্ট্রোক কেন হয়?
কিছু রিস্ক ফ্যাক্টর আছে যার কারণে একজন মানুষ স্ট্রোক এর ঝুঁকিতে থাকেন
- অনিয়ন্ত্রিত উচ্চরক্তচাপ
- অতিরিক্ত ওজন
- রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল
- ধূমপান
- অলস জীবনযাপন
- শরীরচর্চার অভাব
- পরিবারে করো স্ট্রোক বা হার্ট এটাক এর ইতিহাস থাকলে একজন ব্যক্তির স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
কীভাবে বুঝবেন স্ট্রোক হচ্ছে?(Symptoms of Stroke):
এই অবস্থা আপনার অথবা আপনার পাশের জনের হতে পারে যেকোনো সময়।এবং এই অবস্থায় প্রতিটা সেকেন্ডই খুব গুরুত্বপূর্ণ।স্ট্রোক এ যত দেরি হবে তত মস্তিষ্কের ক্ষতি হবে।তাই যত দ্রুত রোগ নির্ণয় করা যাবে তত ভালো।স্ট্রোক হলে বেশ কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন-
- কোন কারণ ছাড়াই তীব্র মাথাব্যথা
- বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
- অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাওয়া
- শরীর অবশ হয়ে যাওয়া
- মুখের বিকৃতি
- স্পষ্ট ভাবে কথা বলতে না পারা
- মাথা ঘোরানো
- কথা শুনতে না পারা
স্ট্রোক হলে কী করবেন?
যেহেতু স্ট্রোক খুবই ইমার্জেন্সি একটি অবস্থা এবং এখানে প্রতিটা মুহূর্ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ তাই যত দ্রুত সম্ভব হেল্পলাইন এ যোগাযোগ করতে হবে।যতক্ষণ স্বাস্থ্যসেবাকারী না আসে ততক্ষণ রোগীকে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে।
রোগ নির্ণয় কিভাবে করা হয়?
1.কিছু ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা:
- যেমন শরীরের বিভিন্ন জায়গার অনুভূতি ঠিক আছে কিনা
- মুভমেন্ট ঠিক আছে কিনা
- স্মরণশক্তি ঠিক আছে কিনা
- এক্সপ্রেশন ঠিক আছে কিনা এসব পরীক্ষা করে দেখা হয়
২.ইমেজিং যেমন CT scan,MRI:এর মাধ্যমে স্ট্রোকের ধরন,মাত্রা এবং অবস্থান জানা যায়
৩.এনজিওগ্রাফি(Angiography):এর মাধ্যমে রক্তনালীর অবস্থা দেখা হয়।
৪.রক্ত পরীক্ষা
৫.ECG
কীভাবে নিরাময় করা হয়?(Treatment):
স্ট্রোক ধরনের উপরে ভিত্তি করে এর চিকিৎসা পদ্ধতি একটু ভিন্ন হয়ে থাকে।যত দ্রুত স্ট্রোক শনাক্ত করে চিকিৎসা শুরু করা যায় তত ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।স্ট্রোক এর চিকিৎসার উদ্দেশ্যই থাকে মস্তিষ্কে যেন আরও ক্ষতি না হয়।
ইস্কেমিক স্ট্রোক এর ক্ষেত্রে:
- TPA(Tissue Plasminogen Activator)
- Anticoagulant:Warfarin
- Antiplatelet:Aspirin,
Clopidogrel - Surgery:Carotid endarterectomy
হেমোরেজিক স্ট্রোক এর ক্ষেত্রে:
- সার্জারির মাধ্যমে জমাট বাধা রক্ত অপসারণ করা
- সার্জারির মাধ্যমে মস্তিষ্কের অভ্যন্তরের চাপ কমানো
পুনর্বাসন(Rehabilitation):
স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তি বেঁচে থাকলেও তার কিছু সমস্যা থেকে যেতে পারে।যেমন শরীরের কোনো অংশ অবশ থাকতে পারে,কথা বলা বন্ধ হয়ে যেতে পারে,স্মৃতিশক্তি লোপ পেটে পারে।এই অবস্থা থেকে রোগীকে আগের অবস্থায় আসতে কিছুটা সময় লাগে।কিছু রোগীর ক্ষেত্রে ইমপ্রুভমেন্ট অনেক জলদি হয়ে যায়।আবার অনেকের বছরখানেক লেগে যায়।এই অবস্থায় পরিবারকে সবচাইতে বড় ভূমিকা পালন করতে হয়।তাছাড়া কথা বলা ফিরিয়ে আনতে স্পিচ থেরাপিস্ট দের ভূমিকা রয়েছে।
স্ট্রোক থেকে বাঁচতে করণীয়(Prevention):
স্ট্রোক যেকারও হতে পারে।এর থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে আমাদের জীবনযাপনকে নিয়ন্ত্রিত,স্বাস্থ্যসম্মত রাখার কোনো বিকল্প নেই।পাশাপাশি উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।খারাপ কোলেস্টেরল বর্ধক খাবার বর্জন করতে হবে।নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।পরিবার ও আশেপাশের সকল কে এ বিষয়ে সতর্ক করতে হবে।