সোরিয়াসিস কী?(What is Psoriasis?):
মানবদেহের অসংখ্য দুরারোগ্য অসুস্থতার মধ্যে সোরিয়াসিস অন্যতম।এই কন্ডিশনে দেহের চামড়ার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হয়।রোগাক্রান্ত স্থানে অনেক চুলকানি হয়,মাঝে মধ্যে ব্যথা হতে পরে এমনকি চুলকাতে চুলকাতে রক্ত পর্যন্ত বের হয়।এই রোগটি সম্পূর্ণভাবে নিরামযোগ্য নয়।আক্রান্ত ব্যক্তিকে আজীবন ভুগতে হয়।সোরিয়াসিস এর চিকিৎসার মূল লক্ষ্যই থাকে এটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা।
সোরিয়াসিস কেন হয়?
সোরিয়াসিস এর কারণ নির্দিষ্ট নয়।এর কারণ হিসেবে বেশ কিছু ব্যাপার কে দায়ী করা হয়
- জিনগত কারণ:এই রোগটি বংশপরম্পরায় হয়ে থাকে।এক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির পরিবারের অন্যান্য লোকদেরও থেকে থাকে।
- ঋতুর পরিবর্তন:আবহাওয়ার পরিবর্তনে এই রোগটির প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়।অতিরিক্ত গরমে ঘামাচি দেখা দেয় এবং ত্বকে ক্ষত সৃষ্টি হয়।সেখান থেকে সোরিয়াসিস হতে পারে
- জলবায়ুর পরিবর্তন:সোরিয়াসিস এর রিস্ক ফ্যাক্টর হিসেবে জনবায়ুর পরিবর্তনকেউ দায়ী করা যেতে পারে।
- ইমিউনোকমপ্রোমাইজড:শরীরের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল থাকলে যেকোনো রোগ হতে পারে।ঠিক তেমনই ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে গেলে সোরিয়াসিস হতে পারে
- জীবাণুর সংক্রমণ:বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া যেমন
- staphylococcus aureus
- Malassezia furfur
- Candida albicans ইত্যাদির সংক্রমণে সোরিয়াসিস হতে পারে
- কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রীয়া:সোরিয়াসিস এর কারণ হিসেবে কিছু ওষুধকে দায়ী করা যেতে পারে।যেমন-
- -বিটা ব্লকার
- -লিথিয়াম
- -অ্যান্টি ম্যালেরিয়াল ড্রাগ
- -NSAID
- -ইন্টারফেরন
- -স্টেরয়েড
সোরিয়াসিস কোথায় হয়
- কান
- চোখের পাতা
- মাথা
- পা
- হাত
- নখ
- শরীরের ভাঁজ।ইত্যাদি
সোরিয়াসিস লক্ষণ
- -ত্বকে গোলাপি রঙের দাগ
- -মাছের আইশের মতো স্কেল
- -অসম্ভব চুলকানি
- -চুলকাতে চুলকাতে রক্ত বের হয়ে আশে
সোরিয়াসিস প্রকারভেদ((Types):
- প্লাক সোরিয়াসিস:এটি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।এটি সাধারণত মাথা,কনুই,হাঁটু,পিঠ এইসব অঞ্চলে হয়।গোলাপি রঙের ক্ষতের উপরে রূপালি বর্ণের আইশের মতো প্লাক থাকে।
- পাষ্টুলার সোরিয়াসিস:এই ধরনের সোরিয়াসিসে ক্ষতের নিচে পুঁজ জমে উঁচু উঁচু অংশের (পোস্টুল)সৃষ্টি করে।
- ইনভার্স সোরিয়াসিস:এটি বিশেষ করে শরীরের ভাঁজে ভাঁজে হয়ে থাকে যেমন যৌনাঙ্গের চারপাশে,বগলে,স্তনের নিচে,নিতম্বে।
- ন্যাপকিন সোরিয়াসিস:এটি সাধারণত বাচ্চাদের হয় যারা ন্যাপকিন পরে থাকে।
- গুট্টেট সোরিয়াসিস:এটি একটি প্রদাহজনক অবস্থা।এতে শরীরের বৃহৎ অংশে অসংখ্য পাপিউল দেখা যায়।
- ইরিথ্রোডার্মিক সোরিয়াসিস:এটিও একটি প্রদাহজনক অবস্থা।এই ধরনের সোরিয়াসিসে ত্বকের এক্সফোলিয়েশন হয়।অসম্ভব চুলকানি ও ব্যথা হয়।
সোরিয়াসিস রোগ নির্ণয়(Diagnosis):
রোগের লক্ষণ দেখে নির্ণয় করা যেতে পারে।
চিকিৎসক রোগীর থেকে কমপ্লিট হিস্ট্রি নিয়ে থাকেন।যেমন
প্লাক এর লোকেশন কোথায়।তাছাড়া জিগেস করা হয় পরিবারের আর করো এই ধরনের রোগ আছে কিনা।
অতপর প্রয়োজন হলে রোগীর ত্বকের স্যাম্পল(বায়োপসি)নিয়ে পরীক্ষার জন্য ল্যাব এ পাঠানো হয়।
তাছাড়া অন্যান্য রোগ যেমন সোরিআটিক আর্থারাইটিস আছে কিনা তা ডায়গানোস করার জন্য রক্ত পরীক্ষা ও এক্সরে সাজেস্ট করা হয়।
সোরিয়াসিস চিকিৎসা(Treatment):
সোরিয়াসিসের কোনো চিরস্থায়ী প্রতিকার নেই।তবে এর লক্ষণ ও উপসর্গ থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন উপায় আছে।
- টপিক্যাল এজেন্ট:
- টপিক্যাল কর্টিকোস্টেরয়েড
- ভিটামিন-ডি অ্যানালগ
- স্যালিসাইলিক অ্যাসিড
- পেট্রোলিয়াম জেলি
- UV ফটোথেরাপি
- সিস্টেমিক এজেন্ট:
- মিথোট্রেক্সেট
- সাইক্লোস্পোরিন
- হাইড্রক্সিকার্বামাইড
- ডাইমিথাইল ফিউমারেট ইত্যাদি।
সোরিয়াসিস প্রতিরোধ(prevention):
যদিও সোরিয়াসিসের নির্দিষ্ট কারণ বের করা মুশকিল তবুও যেসব কাজ করলে বা যেসব পরিবেশে থাকলে এর লক্ষণ প্রকাশ পায় সেসব স্থানকে পরিত্যাগ করা উচিত।সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।নিজের ব্যবহারের জিনিস অন্য করো সাথে শেয়ার করা যাবেনা।
বসবাসের স্থান সবসময় জীবাণুমুক্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে।পুটিকর খাবার খেতে হবে।