পাইলস(Haemorrhoid):
পাইলস বা হেমোরয়েড আমাদের কাছে একটি অতি পরিচিত শব্দ।বিভিন্ন কারণে যখন আমাদের পায়ুপথের রক্তনালী গুলো ফুলে বড় হয়ে যায় এবং কিছু জটিলতা সৃষ্টি করে সেই অবস্থা কে বলা হয় পাইলস বা হেমোরয়েড।আমাদের শরীরের সকল অঙ্গের জীবিত থাকতে এবং ঠিকমতো কাজ করতে প্রতিনিয়ত সেই সকল অঙ্গে রক্ত পরিবহন হতে হয়।আর রক্ত পরিবহনের জন্য রক্ত নালিকা থাকে প্রত্যেক অঙ্গপ্রত্যঙ্গের জন্যই।ঠিক তেমনই আমাদের পায়ুপথের জন্যও রক্ত নালিকা আছে।যখন কোনো কারণে এই রক্ত নালিগুলো বড় হয়ে যায় তখন আমরা তাকে পাইলস বলি।
প্রকারভেদ(Types):
অভ্যন্তরীণ পাইলস(Internal Piles):এই ধরনের পাইলস পায়ুপথের ভেতর থেকে তৈরি হয়ে ভিতরেই থাকতে পারে অথবা বাইরের দিকে বেরিয়ে বের হয়ে আসে।পায়ুপথে এর অবস্থানের উপর ভিত্তি করে আবার কয়েকটা উপভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে।যেমন :
- ফার্স্ট ডিগ্রি পাইলস(First Degree Piles):এই ধরনের পাইলস পায়ুপথের ভেতরেই থাকে।বাহির থেকে দেখা যায়না।
- সেকেন্ড ডিগ্রি পাইলস(Second Degree Piles):এই ধরনের পাইলস স্বাভাবিক অবস্থায় ভেতরেই থাকে।তবে মলত্যাগ এর সময় বের হয়।আবার পরবর্তীতে নিজে থেকেই ভেতরে চলে যায়।
- থার্ড ডিগ্রি পাইলস(Third Degree Piles):এই ধরনের পাইলস বের হলে নিজে থেকে ভেতরে প্রবেশ করেনা বরং রোগীকে নিজের চেষ্টায় প্রবেশ করাতে হয়।
- ফোর্থ ডিগ্রি পাইলস(Fourth Degree Piles):এটি সবসময় বাহিরেই থাকে এমনকি চেষ্টা করেও ঢোকানো যায়না।
বাহ্যিক পাইলস(External Piles):এক্ষেত্রে মলদ্বার এর একদম বাহিরের অবস্থান থেকে পাইলস তৈরি হয় ।এটি একটি বেদনাদায়ক অবস্থার সৃষ্টি করে।
পাইলস এর কারণ(Causes of Piles):
পাইলস এর কারণ হিসেবে কিছু ফ্যাক্টরকে দায়ী করা যেতে পারে।যেমন:
- দীর্ঘ দিন যাবৎ কোস্টকাঠিন্য।যার কারণে অনেক চাপ দিয়ে মলত্যাগ করতে হয়।
- বয়স বাড়ার সাথে সাথে পায়ুপথের গঠন দুর্বল হয়ে যাওয়া।
- ভারী বস্তু উঠা নামা করা।
- দীর্ঘদিনের কাশি।
- গর্ভাবস্থা।
পাইলস এর লক্ষণ(Symptoms):
- পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া।
- মাঝে মধ্যে পায়খানার সময় পায়ুপথে ব্যাথা অনুভব করা।
- পায়ুপথে অথবা বাহিরে চাকা(Lump)অনুভব করা।
- পায়ুপথ থেকে পিচ্ছিল পদার্থ(Mucous)বের হওয়া।
- মলত্যাগের পর মলাশয় ঠিক মতো খালি না হওয়া।
পাইলস এর রোগ নির্ণয়(Diagnosis):
প্রথমত রোগীর লক্ষণ দেখে রোগ নির্ণয় করা যায়।পাশাপাশি ডাক্তার গ্লাভস পড়ে রোগীর পায়ুপথে আঙুল ঢুকিয়ে পরীক্ষা করেন।তাছাড়াও প্রক্টোস্কোপ(Proctoscope) নামক যন্ত্র ব্যবহার করা হয়।তাছাড়াও Routinely কিছু পরীক্ষা করা হয় যেমন রক্ত পরীক্ষা।রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এনিমিয়া দেখা হয়।
পাইলস এর চিকিৎসা(Treatment):
পাইলস নিরাময়ে কয়েকধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে।যেমন:
মেডিক্যাল ট্রিটমেন্ট(Medical treatment):
- পায়খানা নরম করার জন্য:Lactulose,ইসুবগুলের ভুসি
- ব্যথা উপশমের জন্য:Paracetamol
- পায়খানার রাস্তা পিচ্ছিল করার জন্য:Cream,Ointments
সার্জিক্যাল ট্রিটমেন্ট(Surgical treatment):
- Haemorrhoidectomy
- Haemorrhoidal Artery Ligation Operation(HALO)
- Stapled Haemorrhoidectomy
পাইলস এর জটিলতা(Complications):
চিকিৎসা না করলে পাইলস সাইজ এ বড় হয়ে যেতে পারে।এমনকি এটিকে আর ভেতরে প্রবেশ করানো যায়না।মাঝে মধ্যে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে নেক্রোসিস হয়ে যেতে পারে।পাশাপাশি রোগীর জন্য একটা ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় এই পাইলস।
পাইলস এর প্রতিরোধ(Prevention):
- বেশি পরিমাণে আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া।
- পরিমিত পরিমাণে পানি পান করা।
- নিয়মিত ব্যায়াম করা।
- স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন।
সর্বোপরি সর্বস্তরের জনসচেতনতা দরকার পাইলস নামক রোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে।